Header Ads

Header ADS

বিজিবি সম্পর্কে জানুন

 

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর ইতিহাস

ভুমিকা: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বীরত্ব ও ঐতিহ্যের গৌরবমন্ডিত এক সুশৃঙ্খল আধা-সামরিক বাহিনী। বাংলাদেশের সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ, নারী ও শিশু এবং মাদক পাচার প্রতিরোধসহ অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার কাজে বিজিবি 'অতন্দ্র প্রহরী'র দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠার পর ২২৮ বছরের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বর্তমানে এবাহিনীর দায়িত্ব-কর্তব্যের ব্যাপকতা বৃদ্ধি এবং কর্মকুশলতা বহুমাত্রিকতা লাভ করেছে। ইতিহাসের ক্রমধারায় বিজিবি এর বিবর্তন নিম্নরূপ:

 

ক. রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কর্তৃক ১৭৯৪ সালে গঠিত 'ফ্রন্টিয়ার প্রটেকশন ফোর্স' এর নাম পরিবর্তন করে ১৭৯৫ সালের ২৯ জুন 'রামগড় লোকাল ব্যাটালিয়ন' নামে এবাহিনীর যাত্রা শুরু হয়। প্রতিষ্ঠাকালে ৪৪৮ জন সদস্যের দু'টি অনিয়মিত অশ্বারোহী দল ও চারটি কামান নিয়ে এর কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।

 

খ. ফ্রন্টিয়ার গার্ডস : ১৮৬১ সালে পূর্বাঞ্চলের পুলিশ বাহিনীর নিয়মিত ও অনিয়মিত ১৪৫৪ সদস্য সমন্বয়ে 'ফ্রন্টিয়ার গার্ডস' নামে এ বাহিনী পুনর্গঠিত হয়। তখন এর সদর দপ্তর ছিল চট্টগ্রামের এবং অধীনস্থ সীমান্ত ফাঁড়িগুলো কামরূপ, গোয়ালপাড়া, লক্ষীপুর, সিলেট ও ত্রিপুরায় অবস্থিত ছিল। ১৮৭৯ সালে 'স্পেশাল রিজার্ভ কোম্পানী' নামে এবাহিনী পিলখানায় প্রথম ঘাঁটি স্থাপন করে।

 

গ. বেঙ্গল মিলিটারি পুলিশ: ১৮৯১ সালে এবাহিনীর নতুন নামকরণ করা হয় 'বেঙ্গল মিলিটারি পুলিশ'। তখন একজন ইউরোপীয় সুবেদারের নেতৃত্বে এ ব্যাটালিয়নের চারটি কোম্পানী ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অংশ ঢাকা, ধুমকা, ভাগলপুর ও গ্যাংটকে স্থাপন করা হয়।

 

ঘ. ইস্টার্ণ ফ্রন্টিয়ার রাইফেলস: ১৯২০ সালে এর জনবল ও শক্তি বৃদ্ধি করে ১৬ টি প্লাটুন সমন্বয়ে 'ইস্টার্ণ ফ্রন্টিয়ার্স রাইফেলস' নামকরণ করা হয় । তখন এর প্রাথমিক কাজ ছিল সীমান্ত রক্ষা এবং অভন্তরীণ নিরাপত্তায় সহায়তা করা।

 

ঙ. ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস : ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর পুনর্গঠিত এবাহিনীর নামকরণ করা হয় ইপিআর (ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস)। কলকাতা মেট্রোপলিটন আর্মড পুলিশের একটি দল, কিছু সংখ্যক বাঙালি এবং সে সময়ের পশ্চিম পাকিস্তানের এক হাজার প্রাক্তন সৈনিক এবাহিনীতে যোগ দেয়। পরে আরো তিন হাজার বাঙালি নিয়োগ করে এবাহিনীকে সুসংগঠিত করা হয়। দক্ষ নেতৃত্ব ও দিক-নির্দেশনার প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী থেকে অফিসার নিয়োগ করা হয়। ১৯৫৮ সালে এবাহিনীকে চোরচালান দমনের দায়িত্ব দেয়া হয় । ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত এ বাহিনীর জনবল ১৩,৪৫৪ জনে উন্নীত হয়।

 

চ. মুক্তিযুদ্ধে বাহিনীর সক্রিয় অংশগ্রহণ : বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এবাহিনী অবিস্মরণীয় বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাক-হানাদার বাহিনী ঢাকার পিলখানাস্থ তৎকালীন ইপিআর সদর দপ্তর আক্রমণ করে । এবাহিনী সদর দপ্তর থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার বার্তা ওয়ারলেস যোগে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেয়া হয়। ফলে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে এদেশের সৈনিক-জনতা। প্রথম দিকে ইপিআরের বাঙালি সদস্যগণ রণকৌশলগত কারণে বুড়িগঙ্গা নদীর অপর তীরে জিঞ্জিরায় প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পরবর্তীতে এবাহিনীর ১২ হাজার বাঙালি সৈনিক অন্যান্য বাহিনী ও মুক্তিকামী মানুষের সাথে সংগঠিত হয়ে বাংলাদেশের ১১টি সেক্টরে ৯ মাস ব্যাপী সশস্ত্র যুদ্ধে নিয়োজিত থাকে। এবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাগণ পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধ, গেরিলা যুদ্ধ ও শত্রুঘাঁটি নিশ্চিহ্ন করতে আত্নঘাতি আক্রমণসহ অসংখ্য দুর্ধর্ষ অপারেশন পরিচালনা করে। মুক্তিযুদ্ধে এবাহিনীর সর্বমোট ৮১৭ জন সৈনিক শহীদ হন। এঁদের মধ্যে অপরিসীম বীরত্বের জন্য শহীদ ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ এবং শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সী আবদুর রউফ কে সর্বোচ্চ সামরিক খেতাব 'বীর শ্রেষ্ঠ' পদক প্রদান করা হয়। এছাড়া ৮ জন 'বীর উত্তম', ৩২ জন 'বীর বিক্রম' ও ৭৭ জন 'বীর প্রতীক' খেতাবে ভূষিত হন। 

 

ছ. বাংলাদেশ রাইফেলস : দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালের ০৩ মার্চ এবাহিনীর নামকরণ করা হয় বিডিআর (বাংলাদেশ রাইফেলস)। ১৯৮০ সালের ০৩ মার্চ বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এ বাহিনীর কর্মকান্ডের বিশেষ স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় পতাকা প্রদান করা হয়। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ রাইফেল্‌সকে স্বাধীনতা পুরস্কার ২০০৮ প্রদান করা হয় ৷

 

জ. বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ : ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি বাহিনীর সদর দপ্তর, পিলখানায় সংঘটিত বর্বরোচিত হত্যাকান্ডে ৫৭ জন সেনাকর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হয়। মর্মান্তিক ঐ ঘটনার পর বাহিনী পুনর্গঠনের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। মহান জাতীয় সংসদে ২০১০ সালের ০৮ ডিসেম্বর 'বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন, ২০১০' পাশ হয়ে ২০ ডিসেম্বর থেকে তা কার্যকর হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত ২৩ জানুয়ারী, ২০১১ তারিখে বাহিনীর সদর দপ্তরে 'বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ' (বিজিবি) এর নতুন পতাকা আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তোলন এবং মনোগ্রাম উন্মোচনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় এবাহিনীর নতুন পথচলা।

 

উপসংহার: নতুন আইনের আওতায় বাহিনীর সাংগঠনিক পুনর্গঠন কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এ বাহিনীর বর্তমানে ০৫ টি রিজিয়ন, ১৬টি সেক্টর, ৬১ টি ব্যাটালিয়ন, বর্ডার গার্ড ট্রেনিং সেন্টার এন্ড কলেজ, ০৫ টি বিজি হাসপাতাল ও বহু সংখ্যক বিওপি এর মাধ্যমে অর্পিত দায়িত্ব কার্যকরভাবে পালন করে যাচ্ছে। বিজিবি 'সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী' হিসেবে সীমান্ত সুরক্ষা, চোরাচালান প্রতিরোধ, নারী ও শিশু এবং মাদক পাচারসহ যে কোনও ধরণের সীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.